logo

শিরোনাম

রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় হলেন মামলার আসামী,জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া

নিউজ সেভেন্টি ওয়ান ডট টিভি ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫ | সময়ঃ ১২:০০
photo
রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় হলেন মামলার আসামী,জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া

জেলা প্রতিনিধি,নেত্রকোণা 

নেত্রকোণার দুর্গাপুরে সাম্প্রতিক একটি সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির রাজনীতি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গত ২২ মে সন্ধ্যার পর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের আব্বাসনগর এলাকায় সংঘটিত এই সংঘর্ষে শফিকুল ইসলাম (৪০) নামে একজন নিহতের ঘটনা ঘটে।  


এই সংঘর্ষে আরও অন্তত ছয়জন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনার সময় বাড়িঘরেও হামলা চালানো হয় বলে জানান স্থানীয়রা।


এ ঘটনায় ২৪ মে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮০-৯০ জনকে আসামী করে নিহতের ভাই খাইরুল ইসলাম মামলা দায়ের করে।


স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,বিলবোর্ড লাগানোকে কেন্দ্র করে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমানের পক্ষে তার কর্মী-সমর্থকরা দুর্গাপুর পৌর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিলবোর্ড লাগাতে যান। পরে সেখানে বিএনপির কিছু লোকজন বাধা দেয়। এর জের ধরে পরবর্তীতে ঘটনা বড় আকার ধারণ করে।


এই ঘটনা বর্তমানে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। এই মামলায় পুলিশ ১৬ নং আসামী তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে৷ ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় তাজুল ইসলাম ঘটনার সময় দুর্গাপুর উপজেলার বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি তখন নেত্রকোণা সদরে ছিলেন। সেখানকার বিভিন্ন দোকানে ওইসময়ে তার কেনাকাটার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফলে এটি জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তিনি একটি মুদি দোকান ও অপর একটি ফার্মেসিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ঔষধ ক্রয় করছিলেন। ফেসবুকে এই ভিডিও শেয়ার করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নাগরিকরা বলেন, তাকে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তারা এই নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। 


সরেজমিন অনুসন্ধানে এমন আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। মামলায় ১২ নং আসামী করা হয় দুর্গাপুর পৌর যুবদলের সদস্য সচিব আল ইমরান সম্রাট গণিকে। অনুসন্ধানে দেখা যায়,তিনি ঘটনার সময় দুর্গাপুর পৌর শহরে অবস্থান করছিলেন। সেসময় তিনি অন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে পৌর বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করা একাধিক কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়,সম্রাট গণি দলের সাংগঠনিক কাজে সবসময়ই তৎপর। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সেদিন রাত পর্যন্ত সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক নানা কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। মূলত প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাকে এই মামলার আসামী করা হয়েছে।


মামলার ১৭ নং আসামী,যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন গত দেড়মাসেরও বেশি সময় যাবত মানিকগঞ্জে পেশাগত কাজে অবস্থান করছেন। তাকেও এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।


সংঘর্ষের ঘটনার সময় পৌর ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক সালমান মুক্তাদির দুর্গাপুর শহরের আত্রাখালী ব্রীজ সংলগ্ন নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রিয়াজ ইলেকট্রনিকসে ছিলেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি রাতে জেনেছেন। তাকেও এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। রিয়াজ ইলেকট্রনিকসের পার্শ্ববর্তী দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন,সেদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সালমান মুক্তাদির নিজ দোকানেই ছিলেন। দোকানে কাস্টমারদের সাথে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।


এই মামলার আসামী সেকুল মেম্বার ঘটনার সময় একটি জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। জানাজা পড়ে এসে তিনি ঘটনা সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে অবগত হন। তাকেও ফাঁসানো হয়েছে এই হত্যা মামলায়। স্থানীয় বাসিন্দা মো: হারুন মিয়া বলেন,সেকুল মেম্বার বরুইগঞ্জ বাজারে আব্দুল জব্বার মেম্বার এর জানাজায় উপস্থিত ছিলেন এবং দাফন কাফন শেষ হবার পর তিনি বাজারে এসে সংঘর্ষের ঘটনার ব্যাপারে জানতে পারেন।


বিএনপির দু:সময়ের কর্মীদের বিরুদ্ধে এই  মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দুর্গাপুর প্রেসক্লাব মোড়ে  ২৬মে দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার নারী সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকার হাজারো নারী অংশগ্রহণ করেন। এতে তারা এই মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার না হলে তারা আরো কঠোর কর্মসূচি দেবার ঘোষণা দেন।


এই মামলাকে ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসামূলক মনে করছেন নারী নেত্রী জাহানারা বেগম। তিনি বলেন,বিএনপির দু:সময়ের নেতাকর্মীদের নামে একটি কুচক্রী মহল হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।  এই মামলা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের  ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাদের। আমি এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাই। 


দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন,বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রাজপথে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী সোচ্চার ছিল তাদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এই মিথ্যা মামলা করেছে। জামাল মাস্টার সহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের সকলেই সামাজিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি।
মামলা দিয়ে তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।


অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই মামলার বাদী খাইরুল ইসলামের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 


দুর্গাপুর থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন,এই মামলায় এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই হত্যা মামলার ব্যাপক তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে৷

  • নিউজ ভিউ 2169