বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের সাংবাদিক ও ব্লগার এবং ফেসবুকে লেখক/লেখিকারা প্রায়ই হামলার হুমকি, আইনি হয়রানি, সেন্সরশিপ, ইসলামি গ্রুপ সংগঠকদের চক্ষুশুলের শিকার হন। বিশেষ করে মুক্ত চিন্তার নারী লেখিকা ও সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্র ও বাইরে হয়রানির শিকার হওয়ার খবর প্রতিনিয়তই কানে আসে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে যারা ইসলামের নামে গড়া কড়া বিধি নিষেধ আরোপ করেন, তাদের বিরুদ্ধে লেখা লেখিকা বা নারী সংবাদকর্মীরা।
এবার হেফাজতের ইসলামের ধমীর্য় এক শীর্ষ নেতার রোষানলে পড়ে শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনে বাধ্য হয়েছেন একজন সাহসী নারী লেখিকা ও সাংবাদিক মাসুমা ইসলাম নদী। যিনি ফেসবুকে ও তার ওয়েব ব্লগে দীর্ঘ গত সাত বছর যাবত লিখছেন ধর্মীয় প্রথার নামে নির্মমতা ও কুংস্কারের বিরুদ্ধে। তার লিখায় উঠে এসেছে এসবের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আহব্বানের কথা।
কিন্তু একদল মৌলবাদীর চক্ষুশুল হওয়াতে লেখিকা হঠাৎ করেই নীরব হয়ে গেছেন। নিজের ও সন্তানদের জীবন রক্ষা করতে আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। জীবন রক্ষায় এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করে চলছেন নদী।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা “আর্টিকেল নাইনটিন” উদ্যোগে অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্ম গুরু ও রাজনৈতিক প্রথার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই চরম অবমাননার শিকার হতে হয়।
মানবাধীকার কর্মী শামছুল কাদির বলেন, আমার ব্যাক্তিগতভাবে জানা মতে, আমাদের এ সময়ের ফেসবুকে জনপ্রিয় লেখিকা মাসুমা ইসলাম নদী আজ ব্যাক্তিগত ভাবে এক ধর্মগোষ্ঠির রোষানলে পড়ে বিপর্যস্ত। তার প্রকাশিত ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারনে তাকে বেশ কয়েক বার হামলা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।তার পরিবারকে হেনাস্তা করেছে।তিনি হেফাজতের ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে লিখেছিলেন বেশ কয়েক বার। তার প্রকাশিত ইসালামের কট্টোর পন্থার বিরুদ্ধে লেখা গুলো বিভিন্ন ভাবে ফেসবুকে শেয়ার হলে ,তাকে হেফাজতে ইসলামের অনুসারী একদল জনগোষ্ঠী ব্যাক্তিগত ভাবে আক্রমন ও মারধোর করে। যৌন হেনেস্তার শিকার হয়ে লেখিকা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ফেসবুক পেইজ ও নারীর অধিকার বিষয়ক লেখা গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ।
কট্টোরপন্থী ইসলামী দল হেফাজত নেতা মামুনুল হক্বে বিরুদ্ধে নদী তার মতামত প্রকাশ করা ও সমালোচনা করায় তার সমর্থকরা সাইবার এট্যাকের মাধ্যমে নদীর ফেসবুক পেইজটি ডিলিট করে দেয়।
কেন তিনি এই নারীর অধিকার বিষয়ে লেখা পেইজটি সরিয়ে ফেলেছেন সেই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় ।
যে দেশে শাকিব আল হাসানের মতন ক্রিকেটার দূর্গা পূজায় অংশ গ্রহন করলে, মৌলবাদীদের রোষানলে পড়ে ক্ষমা চাইতে হয় জনগনের কাছে , সে দেশে সাধারন বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী লেখক ও সাংবাদিকরা তুচ্ছ কারনে হেনেস্তা হবে এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।