logo

শিরোনাম

মুন্সীগঞ্জে ৩ বছরে ৬ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদ, ৭০ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারীরা

নিউজ সেভেন্টি ওয়ান ডট টিভি ডেস্ক
০৬ জুলাই, ২০২৩ | সময়ঃ ০১:৫২
photo

জরিপ বলছে, মুন্সীগঞ্জে গত ৩ বছরে ৬ হাজার ৮শত ৪৭টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ বিচ্ছেদ নারীরা উদ্যোগ নিয়ে করেছে।

photo

সংখ্যাটি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

 

 

জাহাঙ্গীর আলমঃ বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক যাই বলি না কেনো শব্দটি একটি পরিবারের জন্য অভিশাপ স্বরুপ। বর্তমানে দেশে বিবাহ বন্ধনের থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ এর কথাই বেশী কানে আসে।

 

মুন্সীগঞ্জ জেলায় গত ৩ বছরের এই বিবাহ বিচ্ছেদের জরিপ করতেই বেড়িয়ে এসেছে অস্বাভাবিক সংখ্যা।   ২০২০,২১ ও ২২ সালে শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জ জেলায় তালাক বা বিচ্ছেদ হয়েছে ৬ হাজার ৮শত ৪৭টি।

 

তবে মাথায় আকাশ ভাঙে পড়ার মতো তথ্য হলো এর মধ্যে নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৪হাজার ৪২ টি অর্থাৎ ১০০ শতাংশের প্রায় ৭০ শতাংশ তালাক কোন স্ত্রী তার স্বামীকে দিয়েছেন।

 

সারা দেশেই দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতিতে সংকুচিত হয়েছে বহু মানুষের আয়।আর এই অর্থনৈতিক দুর্দশাও ভাঙ্গন ধরাচ্ছে বহু সংসারে। অনলাইন ভিত্তিক একটি জরিপে দেখা গেছে, স্মার্টফোনের অপব্যবহার, স্বামীর প্রবাসে থাকার সুযুগ নিয়ে পরকিয়া প্রেম মুন্সীগঞ্জে বিচ্ছেদের প্রধান কারন।এছাড়াও শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার বা মনের অমিলও বিচ্ছেদের অন্যতম কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

 

সাধারন মানুষ বলছে, পূর্বে এমনটা হতো না, অত্যাধিক আধুনিকতায় বর্তমানের ছেলে মেয়েরা হিতাহিত জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছে।

 

 

মুন্সীগঞ্জ জেলার তালাক রেজিস্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর এই সংখ্যা কমছে না বরং বাড়ছে।

 

তালাক রেজিষ্ট্রি অফিস বলছে, গত ৩ বছরে জেলায় সর্বমোট নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৪হাজার ৪২টি, পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৭শ ১৩টি, সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ২ হাজার ৯৩টি । সেই হিসেবে জেলায় সর্বমোট তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা ৬ হাজার ৮শত ৪৭টি।

 

 

তালাক বা এই বিবাহ বিচ্ছেদ খেলায় ৬ উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা। বিচ্ছেদ নিতে আসা এক নারীর সাথে কথা হয় আমাদের। পরিচয় গোপন রেখে তিনি জানালেন স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে প্রতিদিন রাতে অত্যাচার করে, যা সহ্য করার মতো না।

 

 

 

মুন্সীগঞ্জ জেলা কাজী সমিতির সভাপতি, নারী-শিশু ট্রাইব্যুনালের পিপি লাভলু মোল্লা ও জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সালমা আক্তার বিচ্ছেদের পিছনের অন্যতম কিছু কারন ও ক্ষতির কথা জানালেন।

 

 

 

জেলার তালাক রেজিস্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, বেশির ভাগ তালাক দিচ্ছেন নারীরা। আত্বীয় স্বজনের প্ররোচনা নিয়ে সমঝোয়তায় না এসে এমন সিন্ধান্ত নেন অনেক নারী।

 

এছাড়াও একাধিক জরিপ ও সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগে থেকে নারীদের ওপরও নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতেও অনেক নারী তালাকের দিকে ঝুঁকছেন।

 

 

সরকারি হরগঙ্গা কলেজেরর সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.মো. নুরুল ইসলাম জানান, এই বিচ্ছেদে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় উভয়ের সন্তানের। যারা সঠিক লালন পালনে বেড়ে না উঠার কারনে পরবর্তীতে অপরাধের সাথে জড়িত হয়।

 

 

সামাজিক অবক্ষয় রোধে পারিবারিকভাবে সমঝোতা, সচেতনতা মূলক বার্তা, ও ছেলে মেয়েদের মতামত অনুযায়ী বিবাহের সিন্ধান্ত নিলেই এই বিবাহ বিচ্ছেদ অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।

 

 

 

 

(মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় তিন বছরে পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ২৪৭টি, নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ১৪৩৩টি, সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ৭৯৩টি।

 

টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৪৮টি, নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা৫৩৯টি, নারী পুরুষের সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ২৬১টি।

 

লৌহজং উপজেলায় পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৭১টি, নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৩৮৪টি, সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ১৬২টি।

 

গজারিয়া উপজেলায় পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৮৬টি, নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৪০২টি, সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ১৮৭টি।

 

সিরাজদিখান উপজেলার পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ১০৪টি, নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৬০৫টি, সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ২৯০টি।

 

শ্রীনগর উপজেলায় পুরুষ কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ১৫৮টি, নারী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ৬৭৯টি, সমঝোতার মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা ৪০০টি।)

 

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...