জিতু রায়: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জে দেখা গেল এক অনন্য দৃশ্য। কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী জয় কালী মাতা মন্দির থেকে শুরু হওয়া রথযাত্রা রূপ নেয় হাজারো মানুষের আনন্দ-উৎসবে। লাল-নীল, হলুদ রঙে সাজানো রথ, শঙ্খধ্বনি আর ঢাকের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের রাস্তা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ভক্তরা রথের সামনে ফুল, নারিকেল, কলা ও ধূপ-ধুনুচি উৎসর্গ করেন। পথজুড়ে ছিল কীর্তন ও ধর্মীয় সংগীতের আয়োজন।
পুরো এলাকা যেন হয়ে ওঠে এক ধর্মীয় মিলনমেলা। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু নির্বিশেষে সবাই অংশ নেন রথ টানার এই মহান আনন্দযাত্রায়। শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, এটি যেন হয়ে ওঠে বাঙালি সনাতন সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ।
শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুর থেকেই কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী জয় কালী মাতা মন্দির প্রাঙ্গণে শহরের বিভিন্ন মন্দির থেকে রথ নিয়ে ভক্তরা একত্রে মিলিত হয়। মন্দিরগুলো হলো শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর মন্দির, বাগমামুদালীপাড়া সার্বজনীন পূজা ও রাধাগোবিন্দ মন্দির, মালপাড়া জগন্নাথ মন্দির, পুরাতন হাসপাতাল রোডের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা মন্দির। এরপর বিকেল ৪টায় এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদ। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব
প্রশান্ত কুমার মন্ডল দুলালের সভাপতিত্বে এতে আলোচনা করেন মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম, শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর মন্দিরের সভাপতি অভিজিৎ দাস ববি, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ননী গোপাল হালদার, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভবতোষ চৌধুরী নুপুর ও সাধারণ সম্পাদক সুমন লাল।
পরিবার নিয়ে রথ যাত্রায় অংশ নেয়া প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডঃ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক শিপলু মন্ডলের মতে, “বছরের পর বছর ধরে এই রথযাত্রা আয়োজন হচ্ছে। একদিকে ধর্মীয় অনুভূতির প্রকাশ, অন্যদিকে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে মিলেমিশে উৎসব উদযাপনের অপূর্ব সুযোগ—এই রথ আমাদের সেই ঐক্যের প্রতীক।” একদিকে যখন ধর্মীয় আচারের পরম্পরা রক্ষা হয়, অন্যদিকে সংস্কৃতির স্রোতধারায় গা ভাসিয়ে দেয় জনসাধারণ।
রথযাত্রায় অংশ নেয়া ষাটার্ধো প্রবীণ ব্যক্তি গণেশ মণ্ডল বলেন, “আমার দাদারাও এই রথ টেনেছেন। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। এটা আমাদের বেঁচে থাকার এক অনুভূতি। এই রথ শুধু কাঠের গড়া নয়, আমাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর পরিচয়ের প্রতীক।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব
প্রশান্ত কুমার মন্ডল দুলাল জানান, এই উৎসবটি শুধুমাত্র ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, এটি সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছে আমাদের সামাজিক সংহতির অন্যতম স্তম্ভ। রথযাত্রা উপলক্ষে শহরের প্রতিটি মন্দির সুশোভিত করা হয় বিভিন্ন আলোকসজ্জা ও ব্যানারে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দিকটিও নিশ্চিত করেন।
রথযাত্রা শেষে স্থানীয় মন্দিরগুলোতে ধর্মীয় আলোচনা, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।