logo

শিরোনাম

বিলুপ্তির পথে খেজুর রসের ম-ম গন্ধ আর মাছির ভনভন শব্দ

নিউজ সেভেন্টি ওয়ান ডট টিভি ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | সময়ঃ ১২:০০
photo
বিলুপ্তির পথে খেজুর রসের ম-ম গন্ধ আর মাছির ভনভন শব্দ

মো: আবুল খায়ের 

ঋতু বৈচিত্র্যের পালাক্রমে চলছে শীতের মৌসুম। প্রতিবছর খেজুর গাছের রস আর নানা রকমের ফুল-ফল,সবজি,পিঠা পুলির আমেজ নিয়ে হাজির শীতকাল। শীতকাল মানেই খেজুরের সর আর পিঠা।  

 

সন্দ্বীপ উপজেলা বাংলার প্রায় তিন’শ বছরের একটি পুরানো দ্বীপ। বাংলার অনেক গ্রামের মতো সন্দ্বীপেও হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে নানা রকমের পিঠে বানানোর উৎসব।

 

আজ থেকে পনের-বিশ বছর আগেও কুয়াশা ঘেরা শীতের সকালটা খেজুরের রস ছাড়া জমেই উঠতো না এই দ্বীপের মানুষের । ভোরের শিশিরে ভিজা সন্দ্বীপের সকালবেলা, রসের তৈরি এক চুমুক চায়ে ফুরফুরে কাটতো সারাবেলা।

 

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য শীতকালে খেজুর রসের ম-ম গন্ধ আর গাছে গাছে ছুটে আসা মাছির ভনভন শব্দের দৃশ্য হারিয়ে যাচ্ছে দিনদিন। হারিয়ে যাচ্ছে মাটির চুলাকে ঘিরে বসে শিশু-বৃদ্ধার পিঠে খাওয়ার উৎসব ও রসের তৈরি নানা রকমের পিঠে খাওয়ার ধুম। 

 

বাংলা আশ্বিন মাস থেকে সাধারণত রস সংগ্রহ শুরু হয়। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। কারণ এই দুই মাসে শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়।আবহাওয়া যত ঠান্ডা থাকে রসও তত বেশি বেড়ে যায়।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রস কিছুটা গোলাটে রং দারুণ করে। আবহাওয়ার সাথে খেজুর গাছের থাকে নিবিড় সম্পর্ক। আবার তাপমাত্রা যতই বাড়তে থাকবে রসের পরিমাণ ততই কমতে থাকে।
২০ বছর আগের তুলনায় এখন খেজুর গাছ প্রায় ২০ শতাংশ।

পনের-বিশ বছর আগে দেখা যেত শীতের মৌসুম আগমন হওয়ার একমাস আগে থেকে গাছিরা গাছ কাটার প্রস্তুতি নিয়ে রাখত।সারাবছর অযত্নে পড়ে থাকা গাছটিরও তখন যত্ন বেড়ে যেত।খেজুরের রস বিক্রয় করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো।কিছু কিছু গ্রামে দুই-তিন দিন আগে থেকেই ক্রেতারা গাছিদের কাছে গিয়ে রসের জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখত।যেমন সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা, মুছাপুর ও হারামিয়া ইউনিয়নে এমন দৃশ্য দেখা যেত সচারাচর। 
রসের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো পুরো এলাকায়। গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শোনা যেত মাছির ভনভন শব্দ।

সারিবদ্ধ খেজের গাছের লাইন, গ্রামে গ্রামে রস দিয়ে নানা রকমের পিঠে তৈরি করার উৎসব, গাছিদের কাঁধে করে হাঁটে নিয়ে আসার হাঁড়ি হাঁড়ি রসের কলস এমন দৃশ্য বাংলার এক পুরানো সংস্কৃতিরই অংশ।মনে হতো শীত যত বেশি পিঠে রসের ক্ষির ও পিঠে খাওয়ার আনন্দ ততই বেশি। এমন অসাধারণ দৃশ্যকে কবি সুফিয়া কামাল যেভাবে চিত্রায়িত করেছিলেন: 

পৌষ পর্বণে পিঠে খেতে বসে 
খুশিতে বিষম খেয়ে। 
বড় উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে। 

শীতকালে প্রকৃতির প্রধান সৌন্দর্য খেজুরের রস৷ কারণ শীতকালে খেজুরর রসের প্রতি কম বেশি সবার থাকে লোভনীয় আকর্ষণ। রস দিয়ে তৈরি হয় গুড় সহ নানা রকমের সখিন সখিন পিঠা৷ এছাড়াও খেজুর রসে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম যার অভাবে  আমাদের কাজে অবসন্ন ও ক্লান্তি ভাব আসে। প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হওয়ায় খেজুরের রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

গত কয়েক বছরে অনেক খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামে কম বেশি গাছ থাকলেও গাছির অভাবে আগের মতো মিলছেনা রসের দেখা।কারণ জানা যায় নগরায়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গাছিরা। যারা আছে তারা রস ও গুড় বিক্রয় করে তাদের সংসার চালতে হিমসিম খাচ্ছে।ক্রেতার সংখ্যা ও কমে গেছে অনেক গুণ। গাছ কেটে বসতঘর ও জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে মানুষ।তাই এই কাজের প্রতি গাছিদেরও আগ্রহ দিনদিন কমে যাচ্ছে।

  • নিউজ ভিউ 198