জুয়েল চৌধুরী, মহেশখালী:
কক্সবাজার জেলার সাগরের বুকে থাকা মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলে আড়াইশের অধিক গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হয়েছেন অনেকেই।
২৪শে অক্টোবর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলায় হামুনের তীব্রতায় এমন পরিস্থিতিতে পড়ে মহেশখালী উপকূলবাসী। থেমে থেমে চলে তীব্র জড়ো হাওয়া। তবে ঘন্টার বেশি স্থায়ী হতে পারেনি "হামুন"।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, কক্সবাজার উপকূল থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দুরে ছিল ঘূর্ণিঝড় "হামুন"র অবস্থান। অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে স্থলভাগ স্পর্শ করতে সক্ষম হয় ঘূর্ণিঝড় হামুন। ঝড়টি পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানালেও এত সময় নেয়নি ঘূর্ণিঝড় হামুন। হঠাৎ গতিরোধ পরিবর্তন করে ঘন্টা চারেকের ব্যবধানে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুয়ায়ী বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। যা দমকা হাওয়া আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
রাত ৮ টার পর বাতাসের তীব্রতা ছিল অনেক। এসময় টানা ত্রিশ মিনিটে উপড়ে গেছে গাছপালা ও আধা কাঁচা ঘরবাড়ি। এতে কালারমারছড়া- গোরকঘাটার প্রধান সড়কের উপরে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে অন্ধকার হয়ে পড়েছে গোটা উপজেলা। ধারণা করা হচ্ছে, হামুনের আঘাতে মহেশখালী উপজেলায় শতশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি সংখ্যক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ছাউনির উপর বড় বড় গাছ পড়ে। এমনকি হামুনের আঘাত থেকে বাদ পড়েনি স্কুল মাদ্রাসাসহ বহু প্রতিষ্ঠান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদে উড়ে গেছে সামনের টিনের ছাউনি, কালারমারছড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা ও কালারমারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গাছপালা ও চারদিকের ঘেরা বেড়া তীব্র বাতাসে পড়ে যায়। তবে বারুদের মত উড়ে গেছে কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় করা নতুন টিনের ভবনটি। এছাড়াও পৌরসভা, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, হোয়ানক, শাপলাপুর, ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী ও কুতুবজোম ইউপিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় শুরুর পরপরই রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হয়। বুধবার বিকাল নাগাদ গ্রামীণ ফোন নেটওয়ার্ক সচল থাকলেও পাঁচটার দিকে চলে যায়।
মহেশখালী পল্লী বিদ্যুত অফিসের ডিজিএম নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে পুরো চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মহেশখালীতে ৩৩ হাজার কেবি লাইনের খুঁটি ভেঙ্গেছে ২৩টি, ১১শ কেবি লাইনের খুঁটি ভেঙ্গেছে ৩৫টি, মিটার ভেঙ্গেছে প্রায় ১৫ শতের কাছাকাছি। এছাড়াও অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে মাটিতে পড়ে আছে। তিনি বলেন, প্রথমে ৩৩ হাজার কেবি লাইন চালু করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সম্পূর্ণ লাইন চালু হতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে। তিনি জনসাধারণকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর কালারমারছড়া ইউনিটের সদস্য তারেক আজিজ ইমন বলেন, সারাদিন গুটিগুটি বৃষ্টির পর সন্ধ্যায় এই ঘূর্ণিঝড় স্থায়ী হয়। এতে কালারমারছড়া ইউনিয়নের শতাধিক কাঁচাপাকা বাড়িঘর ও কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে যায়। বিস্তীর্ণ জমির ফসল ও শতশত পান বরজ নষ্ট হয়। অনেকের ঘরের ছাউনি উড়ে যাওয়ায় রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। যেখান থেকে খবর আসছে, সেখানে সাহায্য করতে ছুটে চলেছি এবং তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে কাজ শুরু করেছি।
এ সময় রাতে হারাধন দে নামের একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেলেও বিস্তারিত জানা যায় নি। তবে দেয়াল চাপা ও গাছপালা পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিকালে মহেশখালীতে সবকটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। জানা যায়, তারপরও জনসচেতনতা ও প্রচারের অভাবে তেমন মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়নি। মোবারক আলী ছিদ্দিকী নামে একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, গতবারের তুলনায় এবারে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে তেমন প্রচারপ্রচারণা করা হয়নি। যার দরূণ মানুষের ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে