মুন্সীগঞ্জে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের নতুন দিগন্ত

নিউজ ডেস্ক | news71.tv
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
নিউজ সেভেন্টি ওয়ান ডট টিভি ডেস্ক
ছবি প্রতিনিধ

অফিস থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সেবার পরিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ সদরে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সেবা এখন নতুনভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। প্রচলিত অফিসকেন্দ্রিক সেবার পাশাপাশি এবার সরাসরি বিবাহ মণ্ডপে গিয়েও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সদর উপজেলার একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে সম্প্রতি এক বাংলাদেশি কনে ও ভারতীয় বরের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সরাসরি মণ্ডপে গিয়ে সম্পন্ন করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার জিতু রায়।

মণ্ডপে পুরোহিত, সাক্ষী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ২১৩ নং পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত এই রেজিস্ট্রেশন অফিসে দীর্ঘদিন ধরে দম্পতিরা নিয়মিত সেবা পাচ্ছেন। পাসপোর্ট, ভিসা, সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তার কারণে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই সিরাজদীখান, টঙ্গিবাড়ী, গজারিয়া, লৌহজং সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষও এই সেবার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বাংলাদেশে হিন্দু বিবাহ আইনগতভাবে স্বীকৃত। Hindu Marriage Registration Act ২০১২—এর আওতায় হিন্দু দম্পতিরা ইচ্ছা করলে বিবাহ নিবন্ধন করতে পারেন। যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবুও আইনি প্রমাণ, বিদেশযাত্রা বা পারিবারিক সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে নিবন্ধনের গুরুত্ব অপরিসীম। আইন অনুযায়ী হিন্দু দম্পতির মধ্যে ছেলে ২১ বছর এবং মেয়ে ১৮ বছর পূর্ণ হলে বিবাহ করতে পারে। এছাড়া বিধবা পুনর্বিবাহও আইনি স্বীকৃতি পায়। তবে হিন্দু বিবাহে এখনো ডিভোর্সের সুযোগ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক জটিলতা দেখা দেয়।
রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
• বর-কনের ভোটার আইডি বা জন্মসনদ
• বিবাহের তারিখ ও লগ্ন উল্লেখ করে পুরোহিতের প্রত্যয়নপত্র
• বর ও কনের ৪টি পাসপোর্ট সাইজ ও ২টি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি
• উভয় পক্ষের দুইজন গণ্যমান্য সাক্ষীর স্বাক্ষর

বিবাহের তথ্য যা অবশ্যই জমা দিতে হয়
• আশীর্বাদের তারিখ ও বিয়ের তারিখ
• বিবাহের স্থান (বাংলা ও ইংরেজিতে)
• শীলের/নাপিতের নাম ও ঠিকানা
• ব্রাহ্মণের নাম
• কন্যা সম্প্রদানকারী ব্যক্তির নাম ও সম্পর্ক
• উভয় পক্ষের সাক্ষী ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানা

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করছেন, মণ্ডপে রেজিস্ট্রেশন সেবা চালু হওয়ায় মানুষের সময় ও ভোগান্তি কমেছে। দূরবর্তী এলাকা থেকে অফিসে এসে ভিড় বা অপেক্ষার ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকের আন্তর্জাতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে এই সেবা আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার জিতু রায় বলেন, “হিন্দু বিবাহ শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এর আইনগত স্বীকৃতিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি চাই এই সেবা যেন সবার কাছে পৌঁছে যায়। মণ্ডপে রেজিস্ট্রেশন সেই প্রচেষ্টারই অংশ।”

হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন অফিস সপ্তাহের সাত দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সরাসরি ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে সেবা নেওয়া যায়—০১৯১২-৩৮৪৮৪৭। অফিসের ঠিকানা: ২১৩, পৌর মার্কেট (২য় তলা), দর্পনা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে, মুন্সীগঞ্জ সদর।

মুন্সীগঞ্জে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের এই সম্প্রসারিত সেবা ধর্মীয় আচার, সামাজিক বাস্তবতা এবং আইনগত নিরাপত্তাকে একত্রিত করে সেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
অফিস থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো সেবার পরিধি। মুন্সীগঞ্জে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের এই সম্প্রসারিত সেবা ধর্মীয় আচার, সামাজিক বাস্তবতা এবং আইনগত নিরাপত্তাকে একত্রিত করে সেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।