কাজী কমরউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মহাসম্মিলন আবেগ–উৎসব–স্মৃতি–বন্ধুত্বের বর্ণিল দিন

নিউজ ডেস্ক | news71.tv
আপডেট : ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
নিউজ সেভেন্টি ওয়ান ডট টিভি ডেস্ক
কাজী কমরউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মহাসম্মিলন আবেগ–উৎসব–স্মৃতি–বন্ধুত্বের বর্ণিল দিন

জিতু রায়: “বন্ধু তোমার পথে আমার চেনা পথের ধুলো…”—গানের এই পঙ্‌ক্তিটি যেন সকালবেলার বাতাসে সুর হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল। প্রাঙ্গণে পা রেখেই মনে হচ্ছিল, কোনো অদৃশ্য হাত সময়ের ঘড়িটা ঘুরিয়ে দিয়েছে উল্টো দিকে।


 


কেউ লাঠিতে ভর করে এসেছেন—যেন জীবনের জমানো ক্লান্তি পেরিয়ে শৈশবের উঠোনে ফিরছেন। কারো গালভর্তি পাকা দাড়ি—যেন বছরের পর বছর জমে থাকা অভিজ্ঞতার গল্পগুলো নিয়ে তিনি হাঁটছেন নিজের প্রথম পাঠশালার দিকে।


 


আবার কেউ দূর দেশ থেকে ছুটে এসেছেন—প্রবাসের আকাশের ক্লান্ত পথ পাড়ি দিয়ে, যেন বন্ধুদের দেখার আগ্রহটাই তাঁর ভ্রমণের জ্বালানি।


৮৩ বছরের গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কে কে (কাজী কমরউদ্দিন) গভর্ণমেন্ট ইনস্টিটিউশনের সেদিন ছিল যেন বিশাল এক স্মৃতিবৃক্ষ—যার প্রতিটি পাতায় লেখা আছে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর গল্প।


সেই বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়াতেই মনে হলো—এই তো! আবার সেই টিফিনবেলার হাসি, ক্লাসের ঘণ্টা, খেলার মাঠের ধুলো, ধমকানো শিক্ষকের পরম মমতা।


শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হলো বর্ণাঢ্য পদযাত্রা—ঢাক–ঢোলের আওয়াজে যেন শহরটাও উৎসবে জেগে উঠল।


হাসি–কান্না–উল্লাসে ভরপুর মুখগুলোর সারি যখন কাচারি—সোনালী ব্যাংক—সুপার মার্কেট—পতাকা চত্বর ঘুরে বিদ্যালয়ে ফিরল, তখন পুরো শহর মনে হলো একদিনের জন্য হলেও শৈশবের দরজা খুলে দিয়েছে।


প্রাঙ্গণে ঢুকতেই কেউ বন্ধুকে দেখে ফেটে পড়লেন হাসিতে, কেউ আবার গলা বুজে এলো আবেগে। পুরোনো বেঞ্চ, মাঠের ঘাস, করিডরের দেওয়াল—সব যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল, কত পথ পেরিয়েও মনটা ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। কেউ বসে গল্পে ডুবে গেলেন, কেউ স্মৃতিকে ধরে রাখতে তুললেন সেলফি, গ্রুপ ছবি, ভিডিও—প্রাঙ্গণ যেন মুহূর্তে পরিণত হলো রঙতুলিতে আঁকা স্মৃতিচিত্রের গ্যালারিতে।


আর চারদিকে চলছিল ভরপুর খাওয়া–দাওয়া—কাচ্চি বিরিয়ানি, কাবাব, স্ন্যাকস। বন্ধুর প্লেট থেকে খাবার তুলে নেওয়ার সেই সহজ সখ্য যেন আবারও মনে করিয়ে দিল—বন্ধুত্ব মানে হলো ভাগ করে নেওয়া, ভালোবাসা মানে একসাথে থাকা।


পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ব্যাচ প্রতিনিধি পরিচিতি, প্রয়াত শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের স্মরণে দোয়া—সব মুহূর্তেই ছিল সময়ের কাছে নত হওয়া এক আত্মিক নিস্তব্ধতা। 


বিদ্যালয়ের তিনজন প্রবীণ শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হলে তাঁদের চোখে যে অশ্রু চিকচিক করেছিল—তা ছিল হাজারো শিক্ষার্থীর কৃতজ্ঞতার অক্ষরহীন কবিতা। বিদ্যালয়ের ইতিহাসের ১২ জন প্রবীণ প্রাক্তন শিক্ষার্থীও পেলেন বিশেষ সম্মাননা—তাঁরা যেন এই দীর্ঘ যাত্রার জীবন্ত ইতিহাসপাঠ।


ব্যাচ পরিচিতি, স্মৃতিচারণ আর স্বপ্রণোদিত পরিবেশনায় প্রাঙ্গণে জমে উঠল হাসি–গল্প–অন্তরের সুর। তারপর শুরু হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক আয়োজন—সুর–তাল–লয়ে মানুষ ব্যান্ড, মৌসুমি, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সংগীত পরিচালক জাহিদ নিরব এবং আর্ক ব্যান্ডের জনপ্রিয় শিল্পী হাসান যেন আবারও ফিরিয়ে আনলেন শৈশবের সন্ধ্যাগুলো। 


গানের সুর ভেসে যেতেই মাঠটিও যেন একটু একটু করে তরুণ হয়ে উঠল।
এই পুনর্মিলনীর উচ্ছ্বাসের ভেতরেই গড়ে উঠল নতুন এক প্রত্যয়—বন্ধুত্বের মূল্যবোধ, মানবিকতা ও দায়বদ্ধতার আলো ছড়িয়ে দিতে গঠন করা হবে একটি শক্তিশালী এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন।

 নবীন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা, ক্যারিয়ারের পথ দেখানো, বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা নেওয়া—সবকিছুর প্রতিশ্রুতি মিলল এক সুতোয়।
শেষ বিকেলের আকাশ যখন কমলা–নীল হয়ে রঙ বদলাচ্ছিল, সবাই তখনও দাঁড়িয়ে—হাসিমুখে, কিন্তু মনভরা আবেগে। যেন এই প্রাঙ্গণ ছাড়তে মন চাইছে না কারো। মনে হচ্ছিল—
এটি শুধু পুনর্মিলনী নয়, শেকড় ছুঁয়ে দেখার দিন,
বন্ধুত্বের হাত শক্ত করে ধরার দিন,
আর গৌরবময় ৮৩ বছরের ইতিহাসকে নতুন করে হৃদয়ে তুলে নেবার দিন। 


 কে কে (কাজী কমরউদ্দিন) গভর্ণমেন্ট ইনস্টিটিউশনের
 এই মিলনমেলা তাই শুধু স্মৃতি নয়—
এটি হৃদয়ের গহিনে জমে থাকা ভালোবাসার আলোকবর্তিকা,
যা প্রতিটি প্রাক্তন শিক্ষার্থীর জীবনে আলো হয়ে জ্বলবে বহু বছর।